“রাম চন্ডী’র মিত্তির”
–প্রদীপ দে
আজ আর কোন চেঁচামেচি কিছু নেই। বাপরে বাপ! আজ একেবারে গিন্নিকে মেরে দিয়েছি। বাজার করে দেখিয়ে দিয়েছি বাজার কাকে বলে?
বাজার আনার ব্যাজার নেই। কিন্তু গিন্নির যা মুখ!
একেবারে মাথা খারাপ করে দেয়। একটু এদিক ওদিক হলেই রাম রাবণের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আর আমি বেচারা রাম (?) চুপ করে নেতিয়ে থাকি। গিন্নি একেবারেই ক্রোধান্বিত রাবণ ফুঁসে ওঠে আর আমি রাম চুপসে যাই। নামটাও যে স্বর্গীয় বাপ মার দেওয়া রামদুলাল মিত্তির। গিন্নি চন্ডী ওঝা থেকে চন্ডী মিত্তীর।
নামেও চন্ডী কাজেও তাই একেবারে রণং দেহী।
তা আজ একেবারে চন্ডী লেজেগোবরে..
হ্যাঁ হ্যাঁ – বলছি বাবা বলছি – আমি আবার একটু ভূমিকা করে দিই নাহলে ক্যামন যেন লাগে!
আজ সকালে গিন্নিমার মুড ভাল ছিল। ঘুমচোখে আবদার করলে- কি চিংড়ি খেতে ইচ্ছা হচ্ছে!
আমার বুকটা ধকপক করে উঠলো। গেলো রে আজ আমার বারোটা বাজবে। কারণ আমি যাই আনবো তাই চেঁচামেচি করার অজুহাত পেয়ে যাবে গিন্নি।
ভয়ে ভয়ে বাজারে গেলাম। তারামা’কে কেবলই ডাকি- আয় মা আমায় বাঁচা।
কপাল যে আজ আমার এত ভালো জানতেম না। তাহলে আগে লটারি কাটতাম। বিরাট ঝাঁকায় এক্কেবারে এক বেগোট লম্বা বাগদা কিলবিল করছে। খুঁজছিলাম কুঁচো তা পেয়ে গেলাম এই ধেড়ে ছুঁচো! গিন্নি কি খুশিই না হবে!
-দাও ভাই, দাও দিকি এক কেজি।
বাগদাগুলি আমার ব্যাগে ঢুকে গেল। কড়কড়ে চারশো টাকা ওকে গুনে বুঝিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম। প্রাণ আর মন সতেজ। বড়সাইজের বাগদা আমায় মন ভরিয়ে দিল। আরো মন ভরে গেল যখন দেখলাম আমার বাড়ির পিছনে থাকা ফ্ল্যাটের বউদি ওই বাগদাই কিনতেই ব্যস্ত। দু’ কেজি নিয়ে নিল। নিশ্চয়ই ভালো- না হলে নেবে কেন? সুযোগ এসে গেল। কথা বলার অভিপ্রায়ে প্রশ্ন করে বসলাম,
-ওহঃ বউদি যে! মাছ নিলেন দেখছি। আমিও নিলাম। ভালোই হবে কি বলেন?
-হ্যাঁ হ্যাঁ একেবারে টাটকা।
-আহা। কি সুন্দর করে বললেন। আপনি যেমন সুন্দরী তেমনই আপনার কথা।
-না না আমি তেমন সুন্দরী কোথায়? আপনার গিন্নি কি কম সুন্দরী?
-আরে কি যে বলেন? চাঁদের সঙ্গে প্যাঁদের তুলনা করছেন? আপনি কত বুদ্ধিমতী।
-আপনি একটু বেশি বেশি। আপনি কি কম ভালো? আমার তো খুব ভালো লাগে বিশেষত আপনি যখন আড়াল থেকে আমায় দেখেন। আপনার চোখ দুটি কি সুন্দর! আমাকে যখন দেখেন তখন আমার বুক ভরে ওঠে। লুকিয়ে দেখেন কেন? আপনাকে তো আমার খুব ভালো লাগে। আমি যদি আপনার হতাম কি সুখের হতো! কতো রোমান্টিক আপনি.… আপনার রান্নাঘরের জানালা দিয়ে দেখবেন আমি তো রান্নাঘরেই থাকি। এখন গিয়েই তো রান্না করবো।
ওঃ তার মানে বউদিও আমায় দেখে? আর বলেই তো দিল আমাকে ওর ভালোই লাগে। সত্যি জগতে কত ভালো ভালো সুন্দর দেখতে সুন্দরী মেয়েরা রয়েছে। তারা আবার কতই না ভালোবাসতেও জানে। আর আমারটা দেখো? কি বাজে গিন্নিই না জুটেছে আমার কপালে? প্রেম ফ্রেম কিছু নাই একটা মুটকি। যাক আজ যখন আলাপ হয়েই গেল তখন আর এই সুযোগ আমি ছাড়বো না। আজই সুযোগ নিতে হবে। আমাদের রান্নাঘরের জানালা আর বউদির রান্নাঘরের জানালা একেবারে মুখোমুখি। আর একজন সুন্দরী রমণী যখন আমায় চাইছে তখন আমি পুরুষ মানুষ হয়ে একটা মুটকি গিন্নির ভয়ে সিঁটিয়ে যাবো? না না আজ আর ছাড়ছি না। এস্পার না হয় উস্পার! আর বউদির কি ফিগার! দেখলেই মন আর দেহ-আহা আহা — কি যে সুখানুভূতি হয় বারবার। ঘুরে ঘুরে দেখি। আমি ওকে আজ সব বলে দেবো। আমার সামনে আমার সেক্সি সুন্দরী। পরে কথা হবে এখন বাড়ি গিয়ে একটা কায়দা তৈরী করি আগে।
-আচ্ছা। আচ্ছা। খুব ভালো। সময় পেলেই কথা হবে। এখন বাড়ি চলি। গিন্নি আবার নজর রাখে।
-আচ্ছা আমিও আপনার অপেক্ষায় থাকবো। আপনি কত সুইট!
টা -টা করে ও হাওয়া হয়ে গেল।
আমিও হাই করে বাড়ির পথ ধরলাম। কিন্তু মন ওই সুন্দরী নিয়ে চলে গেল।
বাড়ি ফিরেই একগাল হেসে গিন্নির হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিলাম। ব্যাগ খুলেই ও খুশিতে ভরে গেল- বাগদা এনেছো? আহাঃ কি যে ভালো লাগে!
যাক অনেকদিন পর তোমার ঘটে বুদ্ধি হয়েছে।
বসো বসো ঘেমে নেয়ে গেছো একেবারে -আমি জল বাতাসা নিয়ে আসছি।
যাক আমি খুশি। গিন্নিকে খুশি করেছি। এবার নিজের খুশি হওয়ার পালা। গিন্নিকে আবদার করলাম- আজ বাগদাটা আমিই রান্না করি। মাছওয়ালা আমাকে একটা রেসিপি বলে দিয়েছে-খুব ভালো।
-সে কি কথা? এরকম কথা কোনোদিন শুনিনি তো? তোমার কি ভীমরতি শুরু হলো?
-আরে না গো না। একদিন দেখোই না কি হয়!
সহজে হবার নয়। গিন্নিকে বোঝানো বড়ই মুশকিল ব্যাপার। তারপর গিন্নি খুবই চালাক। একটা সন্দেহ হলেই সব ভেস্তে যাবে। তখনও আমি এক বোকা বুঝিনি যে আমার গিন্নি আমার বাপ!
অনেক কষ্টে গিন্নিকে ম্যানেজ করে রান্নাঘরে ঢুকলাম। গিন্নি নিজেই ছাদে গাছপালার কাজে চলে গেল। কপাল আজ আমার বড়ই প্রসন্ন। গিন্নিও ম্যানেজ হলো আর পাশের বাড়ির সুন্দরীও আমার প্রেমে পাগল হলো।
রান্নাঘরের জানালায় সুন্দরী দাঁড়িয়ে। ওকে দেখবো আর ইশারায় বাগদা রাঁধবো- এই ছিল মোর সাধ। কিছুবাদেই ও একটা ফিনফিনে নীল নাইটি পড়ে রান্নাঘরে চলে এলো। আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কি সুন্দর ফিগার! এত লোভ হচ্ছে না কি বলবো মাইরি।
তাড়াতাড়ি কড়ায় তেল ঢেলে এককেজি ধোওয়া বাগদা ছেড়ে দিলাম। গনগনে আঁচে বাগদা ভাজতে থাকুক। আমিও রুপসীর আগুনে জ্বলে যাচ্ছি। ওকে ইশারা করতেই ও মুচকি হেসে চোখ মেরে দিল। আমি মোহিত হয়ে গেলাম। দুনিয়া থেকে আমি বিছিন্ন হয়ে যেতে থাকলাম।
ইশারায় কথা হচ্ছে। কত কথা। চোখ ধরে ওর রূপ আর দেহ দেখছি। ও আমার কি দেখছে তা আমার জানা নেই। শুধুমাত্র টানা চোখে আমায় মাপছে। আমার মাথার ঠিক নেই তবুও নাকে একটা বাজে পোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম।
এমন সময়েই তীরবেগে গিন্নি দৌড়ে চলে এল। একেবারে রণচন্ডী রূপে। কি তার গর্জন!
-ওরে মুখপোড়া মিনসে ? তাই বলি এত আদিখেত্যা কেন।? কিসের রান্না? মুখপুড়ির সঙ্গে রান্নাবাটি খেলা চলছিল আর বাগদা পুড়ে ছাই হয়ে গেলো? আমি ঠিক ছাদ দিয়ে দেখছি বুড়ো বয়সে ছুঁকড়ির ছুঁকছুঁকানি। ভাবছে আমি ভিজে মাছটি উল্টে খেতে জানিনা। আয় মিনসে তোর বাগদা রান্নার নামে বাগদী ধরা আমি বার করছি।
বলেই খুন্তি দিয়ে আমার পাছায় বার বার চপেটাঘাত করতে লাগলো। ধুতি খুলে যাওয়ার অবস্থা।
ততোক্ষণে সুন্দরী কবে হাওয়া হয়ে গেছে। বিপদে পড়ে গেলাম বোকা আমিই। কি কপাল আমার? আর গিন্নিরও নজর বটে। ছাদ দিয়েই সব দেখে ফেলেছে। কি করি এবার? আমি চো চো দৌড়ে পড়িমড়ি করে পায়খানায় সেঁদিয়ে গেলাম। ভয়ে আমার সাদা ধুতির পিছন যে হলুদ হয়ে গেছিলো।
–থাক গে আর এগিয়ে লাভ নেই। যেমন কর্ম তেমন ফল……